পরিবেশ বিষয়ক আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে সুস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা এবং পরিবেশগত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে ড. মোহিউদ্দীন ফারুকের নেতৃত্বে 1992 সালে বাংলদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) প্রতিষ্ঠিত হয়। 1993 সাল থেকে বেলা তার কার্যক্রম শুরু করে। সেই থেকে আইনজীবীদের সংগঠন বেলা গবেষনা ও প্রকাশনা, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, আইনগত সহায়তাসহ নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রাপ্ত স্বীকৃতির নাম | প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম | তারিখ/সন |
01 গ্লোবাল 500 রোল অফ অর্নাস লাভ । | ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্টাল প্রোগ্রামি(ইউএনইপি) কর্তৃক প্রদত্ত | 2003 |
02 জাতীয় পরিবেশ পদক | পরিবেশ অধিদপ্তর | 2007 |
03 গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল | গোল্ডম্যান ফাউন্ডেশন | 2009 |
04. এম. সলিমুল্লাহ স্মৃতি স্বর্ণপদক অর্জন করে । | পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যকরী জননেতৃত্ব গড়ে তোরার স্বীকৃতি স্বরুপ | 2009 |
05 র্যামন ম্যগসেসে এওর্য়াড লাভ । | র্যামন ম্যগসেসে ফাউন্ডেশন | 2012 |
বেলা সিলেটে 2004 সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে এ পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশ ও পরিবেশ আইন নিয়ে কাজ করে আসছে। বেলার প্রধান কাজ হচ্ছে পরিবেশ আইন বিষয়ে গবেষনা, পরি্বশ বিষয়ে আইনি সহায়তা প্রদান, পলিসি এডভোকেসী, জনসচেতনতা সৃস্টি ইত্যাদি। এর অংশ হিসাবে বেলা সিলেটে বিভিন্ন সময়ে পরিবেশ ও পরিবেশ আইন বিষয়ে গৃহিত কর্মসুচী :-
- প্রশিক্ষণ কর্মসুচি: সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, জনপ্রতিনিধি, সরকারী- বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্সসচিীর আয়োজন করেছে।
- কর্মশালা ,
- বিভিন্ন্ ইস্যূর উপর ভিত্তি করে ইস্যূ ভিত্তিক আলোচনা সভা,
- বিভিন্ন দিবস উদযাপন (বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও বিশ্ব পানি দিবস),
- তৃণমূল পর্যায়ের জনগোষ্টিকে নিয়ে কর্মশালা , কনসালটেশন মিটিং ,
- মানব বন্ধন ইত্যাদি
এছাড়াও জনগণের পরিবেশগত অধিকার রক্ষায় এবং পরিবেশগত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বেলা জনস্বার্থে রীট মামলা করেছে । সিলেটে 2004 সাল থেকে বেলার কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এপর্যন্ত 20 টি মামলা দায়ের করেছে।সিলেট জেলায় বেলার উল্লেখযোগ্য মামলাগুলো হলো-
- সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জালালাবাদ পার্ক ও ওসমানী শিশু উদ্যান রক্ষায় 2006 সালে একটি রীট মামলা করা হয় (রীট মামলা – 9216/06)।
- সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আম্বরখানায় যুগী টিলা কাটা বন্ধ করতে 2009 সালে একটি রীট মামলা করা হয় (রীট মামলা নং-4399/09)।
- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরফিন টিলা কেটে পাথর ও মাটি উত্তোলন বন্ধ করতে 2009 সালে একটি রীট মামলা করা হয় (রীট মামলা নং bs-5873/09)।
- কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ধলাই, পিয়াইন ও ডাউকী নদী থেকে মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে 2009 সালে একটি রীট মামলা করা হয় (রীট মামলা নং-4958/09) ।
- সিলেট জেলার ছয়টি উপজেলায়(সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, বিয়ানী বাজার, জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ)টিলা কাটা বন্ধ করতে 2011 সালে একটি রীট মামলা করা হয় (রীট মামলা নং-9750/11) ।
- গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এ ডাউকী নদীতে অপরিকল্পিত বেইলী ব্রীজ অপসারণের জন্য একটি রীট মামলা করা হয় (রীট মামলা bs-10703/11)। এ মামলায় উচ্চ আদালত 2012 সালের 5 ডিসেম্বর ব্রীজ অপসারণ ও ডাউকী নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষনার আদেশ দেন।
- সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলায়(সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট)অবৈধভাবে পরিচালিত ষ্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন ও পরিচালনা বন্ধ করে নির্দিষ্ট ক্রাশিং জোনে স্থানান্তরের দাবীতে 2015 সালের 8 জুলাই একটি রীট মামলা করা হয় (রীট মামলা -7552/15)।
- আদালত অবমাননার মামলা : কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ধলাই, পিয়াইন ও ডাউকী নদী থেকে মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে 2009 সালে একটি রীট মামলা করা হয় (রীট মামলা নং-4958/09) । এ মামলায় উচ্চআদালত যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে রায় দেন কিন্তু উক্ত রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় 2012 সালে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয় (কনটেম্পট পিটিশন নং-199/12)।
- সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে নাইকো কোম্পানী কর্তৃক গ্যাস কূপ খনের সময় গ্যাসফিল্ডে বিষ্ফোরনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে 2006 সালে নাইকো কোং এর বিরূদ্ধে মামলা দায়ের করে।
- সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ইসলামপুর মৌজার ফকির টিলা প্রকাশিত সই টিলাকাটা এবং টিলায় বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দেওয়ায় বেলা উক্ত টিলা কাটা বন্ধ করার দাবিতে 2006 সালে একটি রীট মামলা করে (রীট মামলা নং-2020/06)।
- সুনামগঞ্জ পৌরসভার কালিবাড়ী এলাকায় অবস্থিত নাট মন্দিরের পুকুরটি অবৈধভাবে ভরাট ও দখল বন্ধ করনের জন্য বেলা 2006 সালে একটি রীট আবেদন করে (রীট মামলা নং-7466/06)।
- সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই পৌরসভার অভ্যন্তরে আবাসিক এলাকায় দেশে প্রচলিত পরিবেশ আইন লংঘন করে এবং মারাত্নক ক্ষতিকারক শব্দ ও ধোয়া উৎপাদন করে অটো রাইসমিল ও লাকড়ী মিল পরিচালনার বিরূদ্ধে 2006 সালে সুনামগঞ্জ জেলা জজ আদালতে একটি মামলা করা হয় (রীট মামলা নং-স্বত্ব মোকদ্দমা 31/06)।
- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাগরদিঘীরপাড় আবাসিক এলাকায় পরিবেশ আইন লংঘন করে এবং মারাত্নক ক্ষতিকারক উচ্চমাত্রায় শব্দ উৎপাদন করে সিলেট বনফুল এন্ড ব্রেড ফ্যাক্টরী (বর্তমানে ফিজা এন্ড কোং) পরিচালনার বিরূদ্ধে 2006 সালে একটি রীট আবেদন করে (রীট মামলা নং- 6097/06)।
- সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এ সংরক্ষিত বনভূমিতে বেআইনীভাবে স্থাপিত ও পরিচালিত স্টোন ক্রাশার মেশিন সরানোর জন্য 2005 সালে মহামান্য উচ্চ আদালতে রীট আবেদন করা হয় (রীট মামলা নং- 8603/05)।
- সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে প্রবাহমান যাদুকাটা নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের বিরূদ্ধে 2009 সালে উচ্চ আদালতে রীট আবেদন করা হয় (রীট মামলা নং- 4795/09)।
- সিলেট জেলার দক্ষিন সুরমা উপজেলার লালমাটিয়া নামক স্থানে অপরিকল্পিতভাবে জলাশয় ভরাট করে গড়ে ওঠা সোনারগা হাউজিং ও রয়েল সিটি হাউজিং প্রকল্প নামে দুটি আবাসিক প্রকল্পের বিরূদ্ধে বেলা 2009 সালে একটি রীট আবেদন করে (রীট মামলা নং- 4400/09)।
- সুনামগঞ্জ জেলার সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধোপাজান প্রকাশিত চলতি নদী থেকে বেআইনীভাবে পরিচালিত পরিবেশ বিদ্ধংসী বোমা মেশিন দিয়ে পাথর ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য 2013 সালে একটি রীট আবেদন করে (রীট মামলা নং- 7431/13)।
- আদালত অবমাননার মামলা : সুনামগঞ্জ জেলার সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধোপাজান প্রকাশিত চলতি নদী থেকে বেআইনীভাবে পরিচালিত পরিবেশ বিদ্ধংসী বোমা মেশিন দিয়ে পাথর, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য 2013 সালে একটি রীট আবেদন করে (রীট মামলা নং- 7431/13)।কিন্তু মহামান্য উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকায় 2014 সালে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয় (কনটেম্পট পিটিশন নং-224/14)।
- সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সারী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য 2014 সালে একটি রীট আবেদন করা হয় (রীট মামলা নং- 997/14)।
- মৌলভিবাজার জেলার ৬ টি উপজেলার (সদর, রাজনগর, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও বড়লেখা)ছড়াসমুহ থেকে বালু উত্তোলন কার্যক্রম এর বিরূদ্ধে জনস্বার্থে একটি রীট পিটিশন দায়ের করা হয় (রীট পিটিশন নং ২৯৪৮/২০১৬)।
উল্লেখ্য যে, সব মামলাতেই বেলা ইতিবাচক রায় পেয়েছে।
সিলেট বিভাগে বেলা প্রান্তিক জনগোষ্টিকে নিয়ে পরিবেশ ও পরিবেশ আইন এবং পরিবেশ বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কমর্র্সুচি পালন করে আসছে। এতে করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগনের মধ্যে বেলার বা্তা্ পৌছানো যাচ্ছে। পরিবেশ বিষয়ে মানুষ অনেক বেশী সচেতন হয়েছেন পরিবেশ দূষণ ও র্বিপযয় রোধে তারা যথেষ্ট অবদান রাখছেন । আলোচনা সভা কিংবা মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীরাই পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রদান করেন। এছাড়া উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো উপকারভোগীদের উপস্থিতিতে ইস্যূ নির্বাচন ও কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয় । পরিবেশগত অধিকার রক্ষায় বেলার মামলার ফলে উপকৃত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক জনগোষ্টি, যারা পরিবেশের ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ । তাছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ আইন ও বেলার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়।